মেরাজের রাতে আমাদের জন্য আল্লাহর
পক্ষ থেকে উপহার
রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
তিনটি জিনিস দেয়া হয়-(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামায। (২) সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং
(৩) একত্ববাদীদের সমস্ত পাপের ক্ষমা।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এর তাফসীর ও ফযিলত।
সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু'টির ফযীলতের বহু হাদীস
রয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ
দুই আয়াত রাত্রে পাঠ করবে তার জন্যে এ দু'টোই যথেষ্ট। মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু'টি আমাকে আরশের নীচের
ভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নবীকে এ দু'টো দেয়া হয়নি।
' সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে।
মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি সপ্তম আকাশে অবস্থিত সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছেন,যে জিনিস আকাশের দিকে উঠে
যায় তা এই স্থান পর্যন্ত পৌছে থাকে ও এখান হতেই নিয়ে নেয়া হয় এবং যে জিনিস উপর
থেকে নেমে আসে ওটাও এখন পর্যন্তই পৌছে থাকে। অতঃপর এখান হতেই নিয়ে নেয়া হয়।
ঐ স্থানটিকে সোনার ফড়িং
ঢেকে রেখেছিল। তথায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তিনটি জিনিস দেয়া হয়-(১) পাঁচ ওয়াক্ত
নামায। (২) সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং (৩) একত্ববাদীদের সমস্ত পাপের ক্ষমা।
মুসনাদ -ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উকবা বিন আমির (রাঃ)-কে
বলেনঃ সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করতে থাকবে।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আমাকে আরশের নীচের
ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই গ্রন্থেই রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘আমাদেরকে লোকদের উপর তিনটি
ফযীলত দেয়া হয়েছে। সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আরশের নীচের ভাণ্ডার হতে দেয়া
হয়েছে। সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আমার পূর্বে আর কাউকেও দেয়া হয়নি। এবং আমার
পরেও আর কাউকেও দেয়া হবে।
' ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর
গ্রন্থে রয়েছে যে, হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ ‘আমার জানা নেই যে, ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞান রয়েছে এরূপ লোকেদের মধ্যে
কেউ আয়াতুল কুরসী এবং সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত না পড়েই শুয়ে যায়। এটা এমন
একটি ধনভাণ্ডার যা তোমাদের নবী (সঃ)-কে আরশের নীচের ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে।'
জামে তিরমিযী শরীফে একটি হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি
করার দু'হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছিলেন। যার মধ্যে দু'টি আয়াত অবতীর্ণ করে সূরা
বাকারার শেষ দুই আয়াত শেষ করেন। যেই বাড়ীতে তিন রাত্রি পর্যন্ত সূরা
বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা হবে শয়তান সেই বাড়ীর নিকটেও যেতে পারবে
না। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এই হাদীসটিকে গরীব বলেছেন।
কিন্তু হাকীম স্বীয় গ্রন্থ মুসতাদরাকের মধ্যে
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সূরা
বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং আয়াতুল কুরসী পাঠ করতেন তখন তিনি হেসে উঠে
বলতেনঃ ‘সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রহমানের (আল্লাহর) আরশের নীচের ধন ভাণ্ডার। যখন
তিনি (আরবি) অর্থাৎ যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে তাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে।
(আরবি) অর্থাৎ মানুষ যা
চেষ্টা করেছে তাই তার জন্যে রয়েছে অর্থাৎ নিশ্চয় তার চেষ্টার ফল তাকে সত্বরই
দেখানো হবে অর্থাৎ অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩:৩৯-৪১) এই আয়াতগুলো
পাঠ করতেন তখন তাঁর মুখ দিয়ে (আরবি) অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্যে এবং
নিশ্চয় আমরা তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী’ আয়াতটি বেরিয়ে যেতো এবং তিনি বিষন্ন হয়ে
পড়তেন।
ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
আমাকে সূরা-ই-ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আরশের নিম্নদেশ হতে দেয়া
হয়েছে এবং মুফাসসাল সূরাগুলো অতিরিক্ত। হযরত ইবনে আব্বাস। (রাঃ) বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর
পার্শ্বে বসেছিলাম এবং হযরত জিবরাঈলও (আঃ) তাঁর নিকট ছিলেন। এমন সময় আকাশ হতে এক
ভয়াবহ শব্দ আসে।
হ্যরত জিবরাঈল (আঃ) উপরের দিকে চক্ষু উত্তোলন করেন
এবং বলেনঃ আকাশের ঐ দরজাটি খুলে গেল যা আজ পর্যন্ত কোন দিন খুলেনি। তথা হতে এক
ফেরেশতা অবতরণ করেন এবং নবী (সঃ)কে বলেনঃ আপনি সন্তোষ প্রকাশ করুন! আপনাকে ঐ দু’টি নূর দেয়া হচ্ছে যা আপনার
পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তা হচ্ছে সূরা-ই-ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দুই
আয়াত।
এগুলোর প্রত্যেকটি অক্ষরের উপর আপনাকে নূর দেয়া
হবে। (সহীহ মুসলিম) সুতরাং এই দশটি হাদীসে এই বরকতপূর্ণ আয়াতগুলোর ফযীলত সম্বন্ধে
বর্ণিত হলো। আয়াতের ভাবার্থ এই যে, রাসূল অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)-এর উপর
তার প্রভুর পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার উপর তিনি ঈমান এনেছেন। এটা শুনে
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তিনি ঈমান আনয়নের পূর্ণ হকদার। অন্যান্য মুমিনগণও ঈমান এনেছে। তারা মেনে
নিয়েছে যে, আল্লাহ এক। তিনি অদ্বিতীয়।
তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি ছাড়া কেউ উপাসনার
যোগ্য নেই এবং তিনি ছাড়া কেউ পালনকর্তাও নেই। এই মুমিনরা সমস্ত নবীকেই (আঃ)
স্বীকার করে। তারা সমস্ত রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, ঐ আসমানী কিতাবসমূহকে সত্য
বলে বিশ্বাস করে যেগুলো নবীগণের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। তারা নবীদের (আঃ) মধ্যে কোন
পার্থক্য আনয়ন করে না।
অর্থাৎ কাউকে মানবে এবং কাউকে মানবে না তা নয়।
বরং সকলকেই সত্য বলে স্বীকার করে এবং বিশ্বাস রাখে যে, তাঁরা সবাই সত্য ও ন্যায়ের
উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং মানুষকে ন্যায়ের দিকে আহবান করতেন। তবে কোন কোন আহকাম
প্রত্যেক নবীর যুগে পরিবর্তিত হতো বটে, এমনকি শেষ পর্যন্ত শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর
শরীয়ত সকল শরীয়তকে রহিতকারী হয়ে যায়।
নবী (সঃ) ছিলেন সর্বশেষ নবী ও সর্বশেষ রাসূল।
কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর শরীয়ত বাকী থাকবে এবং একটি দল তাঁর অনুসরণও করতে থাকবে।
তারা স্বীকারও করে আমরা আল্লাহর কালাম শুনলাম এবং তাঁর নির্দেশাবলী আমরা অবনত
মস্তকে স্বীকার করে নিলাম। তারা বললো-“হে আমাদের প্রভু! আপনারই নিকট আমরা ক্ষমা
প্রার্থনা করছি এবং আপনারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আপনারই নিকট আমাদেরকে ফিরে
যেতে হবে।' হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেন-হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এখানে আপনার ও আপনার
অনুসারী উম্মতের প্রশংসা করা হচ্ছে। এই সুযোগে আপনি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করুন তা
গৃহীত হবে এবং তার নিকট যাঞা করুন যে,তিনি যেন সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট না দেন।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সামর্থের অতিরিক্ত
কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর করুণা ও অনুগ্রহ।
Comments
Post a Comment